ঘটনাপুঞ্জ
পটভূমি :
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলাদেশে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে পরিসংখ্যানের সম্যক গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারার ফলশ্রুতি এবং দিক-নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ৪টি পরিসংখ্যান অফিস (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান ব্যুরো, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি পরিসংখ্যান ব্যুরো ও কৃষি শুমারি কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আদমশুমারি কমিশন)-কে একীভূত করে বিবিএস প্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্বে পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন সমন্বিত আইন, বিধি বা নীতিমালা না থাকায় কিছু আদেশ ও পরিপত্রের মাধ্যমে বিবিএস এর কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিসংখ্যান আইন মহান জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিবিএস সত্যিকার অর্থে একটি আইনগত ভিত্তি পেয়েছে। উক্ত আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী আইন পাশের পর একই বছর ৩ মার্চ তারিখে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিবিএস এর ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। এটি দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
বিবিএস-এর ভিশন
জাতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ।
বিবিএস-এর মিশন
•সঠিক ও মানসম্মত এবং সময়োপযোগী, পরিসংখ্যান সরবরাহ;
•নীতি নির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, গবেষক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের চাহিদামাফিক উপাত্ত পরিবেশন;
•প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি;
• পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা।
বিবিএস এর কার্যাবলি:
পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিবিএস এর কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) সঠিক, নির্ভুল ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও সংরক্ষণ;
(খ) সঠিক, নির্ভুল ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান প্রণয়নের জন্য দেশের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিপ পরিচালনা;
(গ) জনশুমারি, কৃষি শুমারি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ শুমারি, অর্থনৈতিক শুমারিসহ অন্যান্য শুমারি ও জরিপের লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ;
(ঘ) সরকারি পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ, নীতি-নির্ধারক, গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীগণের চাহিদা অনুসারে দ্রুততার সহিত নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারবান্ধব পরিসংখ্যান সরবরাহকরণ;
(ঙ) পরিসংখ্যান বিষয়ক নীতিমালা ও পদ্ধতি প্রণয়ন;
(চ) শাখা কার্যালয়ের কার্যাদি সরেজমিনে তদারক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ;
(ছ) জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র (National Strategy for the Development of Statistics) প্রবর্তন এবং সময় সময় হালনাগাদকরণ;
(জ) পরিসংখ্যান বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ;
(ঝ) পরিসংখ্যানের ভূমিকা ও কার্যক্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকরণ;
(ঞ) পরিসংখ্যান কার্যক্রম সম্পাদনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ;
(ট) যে কোন কর্তৃপক্ষ, পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে পরিসংখ্যান বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রদান;
(ঠ) ভোক্তার মূল্য-সূচকসহ অন্যান্য মূল্যসূচক এবং জাতীয় হিসাব প্রস্তুতকরণ;
(ড) অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত নির্দেশক প্রণয়ন ও প্রকাশকরণ;
(ঢ) ভূমি ব্যবহারসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন, উৎপাদন-ব্যয় এবং ফসলাধীন জমির পরিমাণ প্রাক্কলন;
(ণ) জিও-কোড সিস্টেম প্রণয়ন এবং একমাত্র সরকারি জিও-কোড সিস্টেম হিসেবে উহা হালনাগাদকরণ ও সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সকল সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ;
(ত) জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (National Population Register) প্রণয়ন ও সময় সময় হালনাগাদকরণ;
(থ) সমন্বিত সেন্ট্রাল জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (Geographic Information System) প্রণয়ন;
(দ) পরিসংখ্যানের প্রধান প্রধান কার্যক্রমসমূহ আন্তর্জাতিক মানে প্রমিতকরণ (Standardization);
(ধ) সংরক্ষণের বিকল্প ব্যবস্থাসহ জাতীয় তথ্য ভান্ডার প্রণয়ন ও আধুনিক পদ্ধতিতে আর্কাইভে সংরক্ষণ;
(ন) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য প্রণীত সরকারি পরিসংখ্যানের মান সত্যকরণ (Authentication);
(প) পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা প্রদান;
(ফ) সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন; এবং
(ব) উপরিউক্ত দায়িত্ব পালন ও কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
রূপকল্প ২০২১ ও বিবিএস:
সরকারের রূপকল্প ২০২১ (Vision 2021) এর অন্যতম লক্ষ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়ণের অন্যতম শক্তি হলো পরিসংখ্যান ও তথ্য প্রযুক্তি। সে বিবেচনায় পরিসংখ্যান বিভাগ (Statistics Division)এর নাম পরিবর্তন করে ২০১২ সালে Statistics and Informatics Division (SID) করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিসংখ্যান আইন মহান জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিবিএস সত্যিকার অর্থে একটি আইনগত কাঠামো পেয়েছে। দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে National Strategy for the Development of Statistics (NSDS) প্রণয়ন করা হয়। NSDS হলো পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত একটি বিস্তারিত, বাস্তবসম্মত, অংশগ্রহণমূলক, পরিবর্তনশীল ও রাষ্ট্রীয় স্বত্ত্বাধীন একটি পরিকল্পনা দলিল। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের তথ্যভিত্তিক, সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও ফলপ্রসূ জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলেন, “আমাদের সরকার জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়নে অফিসিয়াল পরিসংখ্যানের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। পরিসংখ্যান উন্নয়নে জাতীয় কৌশলপত্র (NSDS) ২০১৩ অনুমোদন করেছে। পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল ভিত্তি বিবেচনা করে আমরা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কেন্দ্র হতে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছি”।
রূপকল্প ২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিবিএস এর কার্যক্রম:
বিবিএস পরিসংখ্যান বিষয়ক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ, সংকলন, বিশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ করে থাকে। বিবিএস দাপ্তরিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহ, প্রস্তুত ও প্রকাশ করার পাশাপাশি সরকারের রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে আসছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত প্রধান কার্যক্রমসমূহ তুলে ধরা হলো:
ক. আইসিটি (ICT) সংক্রান্ত কার্যক্রম:
• ডিজিটাল ইনফরমেশন সিস্টেম: বর্তমান সরকারের Digital Vision কে সামনে রেখে বিবিএস এর সকল শুমারি ও জরিপের বিভিন্ন তথ্যসমূহ সার্ভারে সংরক্ষণ করে Web enabled GIS based Information System এর মাধ্যমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন ও মৌজাভিত্তিক তথ্য Digital পদ্ধতিতে Graphically উপস্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন মৌজা, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের জনতাত্ত্বিক তথ্য ও উপাত্তকে GIS Map-এর মাধ্যমে উপস্থাপন ও তথ্য-সেবা প্রদানে Geo-Master file বিবিএস কর্তৃক সংরক্ষিত ও হালনাগাদ করা হয় এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার কাজে এ কোড ব্যবহার হয়।
• স্ট্রেনদেনিং জিও কোডিং সিস্টেম: বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, মৌজা, গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, মহল্লা ও Key Point Installation এর নাম বাংলা ও ইংরেজিতে শুদ্ধ ও সুনির্দিষ্টকরণ, এ সকল সুনির্দিষ্ট নামের একটি আইনগত মর্যাদা (Legal Status) প্রদান, জিও কোড নম্বর প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
• Geographic Information System (GIS) Map: আকাশ (Areal Photography) মাধ্যমে সমগ্র দেশের ছবি সংগ্রহের মাধ্যমে জিআইএস Software ব্যবহার করে সকল মৌজা/মহল্লার ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। GIS Map এর কারণে যেকোন এলাকায় ম্যাপ ভিত্তিক তথ্য উপস্থাপনের কাজ সহজ হয়েছে। এই ম্যাপ ব্যবহারের ফলে শুমারির কাভারেজ সুসংহত হয়েছে এবং শুমারি ও জরিপের গুণগতমানের উন্নতি হয়েছে।
• Data Recovery Lab: বিবিএস কর্তৃক যে সকল শুমারি ও জরিপের ডাটা Magnetic tape এ সংরক্ষিত আছে তা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য Data Recovery Lab প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আশির দশক হতে সংগৃহীত ম্যাগনেটিক টেপে ডাটা সংরক্ষিত আছে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে উক্ত ডাটা রূপান্তর করা হলে ডাটার ব্যবহার সহজ হবে।
• ই-পাবলিকেশন: ই-পাবলিকেশন ডিজিটাল প্রযুক্তির একটি উন্নত সংস্করণ। প্রযুক্তির কল্যাণে গবেষক, পরিকল্পনাবিদ, নীতি নির্ধারক, ছাত্র ও ব্যবহারকারীগণ এখন ঘরে বসে অনায়াসে অনলাইনের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেন। সেজন্য বিবিএস একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ‘ই-পাবলিকেশন পদ্ধতি’ গ্রহণ করেছে। ফলে, বিবিএস কর্তৃক সময় সময় প্রকাশিত/অনুমোদিত আদমশুমারি, অর্থনৈতিক শুমারি ও অন্যান্য জাতীয় জরিপের সাময়িক ও চূড়ান্ত রিপোর্টসমূহ এখন অনলাইন হতে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।
• ই-অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার: কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের সময়মতসরকারি অফিসে আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে 'ই-অ্যাটেনড্যান্স রেজিস্টার' পদ্ধতি স্থাপনের জন্য বিবিএস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ পদ্ধতিতে Thumb Recognition Scanner ব্যবহার করে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে এবং এটা ডেটাবেইজ হিসেবে সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে।
• Dynamic Website স্থাপন: বিবিএস এর সদর দপ্তরের সাথে মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও Globally দ্রুততম যোগাযোগ এবং তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক ওয়েবসাইট উন্নয়ন ও উন্মুক্ত করা হয়েছে।
• স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি অব বিবিএস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক ডাটা কালেকশন ইউজিং জিআইএস: বিবিএস কর্তৃক এ কার্যক্রমের আওতায় ৬৪টি জেলার সকল মৌজা/মহল্লার ডিজিটাল ম্যাপ আপডেট করা হয়েছে। যা বর্তমান সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অন্যতম একটি অগ্রগতি।
শুমারি ও জরিপ সংক্রান্ত কার্যক্রম:
(ক) জনশুমারি (আদমশুমারি) ও গৃহগণনা: জনসংখ্যার আকার, ভৌগোলিক বিন্যাস ও জনমিতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহের মানসম্পন্ন Benchmark Database এর জন্য তথ্য সংগ্রহ করা, জাতীয় উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম বণ্টন, চাকুরিক্ষেত্রে আঞ্চলিক কোটা নির্ধারণ প্রভৃতি কার্যক্রমে জনশুমারি (আদমশুমারি) ও গৃহগণনার তথ্য অপরিহার্য। ১৫-১৯ মার্চ ২০১১ দেশের পঞ্চম জনশুমারি (আদমশুমারি) ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত শুমারিতে প্রথম iCADE Software ব্যবহার ও ICR মেশিনে ২০১১ সালের শুমারির তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শুমারির নির্ভুল ফলাফল দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ শুমারির অধীন ০৫ টি ন্যাশনাল রিপোর্ট ৬৪ টি জেলা রিপোর্ট, সকল জেলার কমিউনিটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। একইসাথে ১৪ টি মনোগ্রাফ এবং ০১ টি পপুলেশন প্রজেকশন প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
(খ) অর্থনৈতিক শুমারি: ২০১৩ সালের মার্চ-মে মাসে বাংলাদেশে তৃতীয় অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। অ-কৃষিমূলক খাতগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নমুখী করার লক্ষ্যে একটি পরিসংখ্যান ভিত্তিক কার্যকর ভিত গড়ে তোলাই এ শুমারির মূল উদ্দেশ্য। তৃতীয় অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে রেকর্ড কম সময়ের মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে শুমারির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া শুমারির মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্যের গুণগত মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে মূল শুমারি সম্পন্ন হওয়ার পর সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গণনা পরবর্তী যাচাই (পিইসি) কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবারই প্রথম ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের (UISC) মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে স্থাপিত সরকারের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বিবিএস সদর দপ্তরে কম্পিউটারে ধারণ করা হয়। অর্থনৈতিক শুমারির সকল রিপোর্ট যথাসময়ে প্রকাশ করা হয়েছে। বিজনেস রেজিস্টার: দেশের প্রত্যেকটি স্থায়ী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক তথ্যসম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রিভূত তথ্যভান্ডার তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিজনেস রেজিস্টার (Business Register) প্রস্তুত কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রণয়নের প্রধান কাঠামো হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বিজনেস রেজিস্টারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, আইনগত কাঠামো, কার্যাবলীর ধরণ, নিয়োজিত জনবলের সংখ্যা, বাৎসরিক গড় উৎপাদন, মোট সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য থাকবে।
(গ) কৃষি শুমারি: দশ বছরের ধারাবাহিকতায় দেশের পরবর্তী অর্থাৎ ৫ম কৃষি শুমারি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে। পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। সমন্বিতভাবে এ শুমারি পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি, ভূমি ব্যবহার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবকাঠামোগত পরিবর্তন বিষয়ক তথ্য এ শুমারিতে সংগ্রহ ও প্রকাশ করা হবে।
(ঘ) ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস্: বিবিএস ১৯৮০ সাল হতে স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম শীর্ষক জরিপ পরিচালনা করে নিয়মিতভাবে বার্ষিক প্রক্ষেপিত জনসংখ্যা, জন্মহার, মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, মাতৃ মৃত্যুহার, প্রত্যাশিত গড় আয়ু, বিবাহ/তালাকের হার, আগমন-বহির্গমন হার, জন্ম নিরোধক ব্যবহার হার ও প্রতিবন্ধী হার ইত্যাদি তথ্য প্রকাশ করে থাকে।
(ঙ) কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (TVET) প্রতিষ্ঠান শুমারি: দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রমের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্র্রহের লক্ষ্যে বিবিএস কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (TVET) প্রতিষ্ঠান শুমারি ২০১৫ পরিচালনা করেছে।
(চ) অন্যান্য শুমারি ও জরিপসমূহ: এছাড়াও বিবিএস এর রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের বাজেটের অর্থে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে পরিসংখ্যান প্রণয়ন করে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উইং ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি যথা-বস্তি শুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪, হেল্থ অ্যান্ড মরবিডিটি স্ট্যাটাস সার্ভে ২০১৪, চাইল্ড মাদার নিউট্রিশন সার্ভে ২০১৪, এডুকেশন হাউজহোল্ড সার্ভে ২০১৪, জনজীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক জরিপ, ২০১৫ পল্লী ঋণ জরিপ ২০১৪, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনশীলতা নিরূপণ জরিপ, জাতীয় হিসাব উন্নয়ন কর্মসূচি এবং স্টেট ফেইজ ফর ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার কার্যক্রমসমূহ সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও বিবিএস নিয়মিতভাবে ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ, শিশু শ্রমশক্তি জরিপ, মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে, উৎপাদনশীলতা জরিপ, সার্ভে অব ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি এবং মজুরি হার জরিপ ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিবিএস কর্তৃক পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ শুমারি ও জরিপসমূহ নিম্নরূপ:
১ জনশুমারি ও গৃহগণনা ১৯৭৪ সাল থেকে ১০ বছর অন্তর মোট ৫ টি শুমারি পরিচালিত হয়েছে
২ অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সাল থেকে মোট ৩ টি শুমারি পরিচালিত হয়েছে
৩ কৃষি শুমারি ১৯৭৭ সাল থেকে মোট ৪ টি শুমারি পরিচালিত হয়েছে
৪ খানার আয় ব্যয় জরিপ ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে মোট ১৫ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
৫ শ্রমশক্তি জরিপ ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
৬ স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে ১৯৮০ সাল থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে
৭ উৎপাদন শিল্প জরিপ ১৯৭২ সাল থেকে ২৮ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
৮ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ১৯৯৩ সাল থেকে ১২ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
৯ চাইল্ড নিউট্রিশন সার্ভে ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকে ৭ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
১০ কৃষি দাগগুচ্ছ জরিপ ১৯৭৪ সাল থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে
১১ ওয়েজ রেট সার্ভে ১৯৭৪ সাল থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে
১২ মূল্য ও মজুরি পরিসংখ্যান ১৯৭৪ সাল থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে
১৩ হেল্থ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে ১৯৮০ সাল থেকে ৫ টি জরিপ পরিচালিত হয়েছে
১৪ কৃষি ফসলের আয়তন ও উৎপাদন জরিপ ১৯৭২ সাল থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে
১৫ পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান ২০১৬ সাল থেকে জরিপ ও সেকেন্ডারি র্সোস হতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হচ্ছে
(ছ) বিবিএস কর্তৃক User-Producer Dialogue আয়োজন: সকল ধরনের জরিপ ও শুমারি কার্যক্রমের পূর্বে Data Producer হিসেবে বিবিএস নিয়মিতভাবে শুমারি/ জরিপ পরিকল্পনা, প্রশ্নপত্র, ডিজাইন, জরিপের ক্ষেত্রে নমুনায়ন পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সভা, ওয়ার্কশপ, ও সেমিনারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট Data user ও Stakeholder গণের নিকট তা উপস্থাপন করে এবং তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত গ্রহণ করে থাকে।
(জ) অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম:
বিবিএস জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা এবং উন্নয়ন-সহযোগীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে। বিবিএস জাতীয় সংস্হা যেমন: A2i, GED, NSDC, BIDS, DAE, DGHS, ISRT এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন: UNFPA, UNDP, UNICEF, WHO, FAO, ICDDR,B, World Bank, UN-ESCAP, JICA, KOICA, SESRIC, WFP প্রভূতির সাথে সমন্বয় ও গবেষণাধর্মী কাজ করছে।
নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা/চ্যালেঞ্জ:
নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হল বিবিএস এ জনবল স্বল্পতা। সাংগঠনিক কাঠামো পুনঃনির্ধারণের পর প্রয়োজনীয় জনবল এখনও পাওয়া যায়নি। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস ভবন নেই এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট নেই। ফলে দক্ষ জনবল গঠন বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিসংখ্যানিক তথ্য ও উপাত্ত প্রদানে উত্তরদাতার অনেক ক্ষেত্রে অনাগ্রহ সঠিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের গৃহিত কার্যক্রমসমূহের বাজেট স্বল্পতা ও বাজেটের বরাদ্দ সময়মত না পাওয়া কাজের গতিকে শ্লথ করে।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ-এর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ:
MDG-উত্তর জাতিসংঘ ঘোষিত SDG এবং অন্যান্য Framework বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তথ্য উপাত্ত দ্বারা সহায়তার নিমিত্ত জরুরি ভিত্তিতে শুমারি/জরিপ করে বিষয় ভিত্তিক Baseline তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে বিবিএসকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেয়া, দ্রুত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা, কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, জরুরিভিত্তিতে ৬৪টি জেলা এবং ৮টি বিভাগে অফিস ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১- ২০৪১ অনুযায়ী যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সেগুলো বাস্তবায়নের পর্যায়সমূহ মূল্যায়নের জন্য তথ্য উপাত্তের পরিমাণগত সূচকসমূহ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ যে ধরনের ডাটাবেইজ তৈরি করছে সেখানে বিবিএস এর অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিবিএসই একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে। এ প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ -মধ্যম আয়ের দেশে প্রত্যাবর্তন এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন যথার্থ হবে।
তথ্যসূত্র: বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (সংক্ষেপিত)